Translate

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০১৫

একজন মমেনা এবং নাস্তিক ব্লগার ।

মমেনা খুব ধার্মিক মেয়ে। সে বাইরে বের হবার সময় খুব ভালো করে পর্দা করে নেয়। চোখটাও ঢেকে রাখে। সারা জীবনে সে একবারের জন্যও পর পুরুষের সামনে নিজের মুখ দেখায়নি। সে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আজ পর্যন্ত কোন সহপাঠি ছেলে তার মুখ দেখতে পারেনি। ক্লাসের সবাই ওকে পরহেজগার বলে ডাকে। তাতে অবশ্য ওর খারাপ লাগে না বরং পরহেজগার শুনতে তার ভালোই লাগে। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। সে নিজেকে নিয়ে গর্বই করে। কারণ সে নামাজ পড়ে, সে সব সময় পর্দা করে চলাফেরা করে, তাই সে অন্যদের থেকে উত্তম; এটা ভেবে ওর গর্ব অনুভব হয় নিজেকে নিয়ে।

একদিন ইউনিভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে গের তার। সে ইউনিভার্সিটির বাসটা মিস করে ফেলে। লোকাল বাসে আসতে তার অনেক দেরী হয়ে যায়। কারণ বাসে এতো ভির ছিল যে ছেলেদের যন্ত্রনায় ও বাসেই উঠতে পারেনি। বাসে কোন সিট ছিল না। সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়েই যাচ্ছিল। মেয়েরাও ধাক্কা ধাক্কি করে বাসে ওটে পড়লো। কিন্তু মমেনা বাসে উঠতে পারলো না। তারপক্ষে ছেলেদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে ওঠা সম্ভব নয়। সে পরহেজগার মেয়ে। তাই সে পরপুরুষের গায়ের সাথে নিজের শরীর স্পর্শ হতে দিতে পারে না। যে করেই হোক ইমান নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
ফলে সন্ধা লেগে গেল ফাকা বাস পেতে। দেরী না করে উঠে পরলো সে। বাস থেকে নামার পরে ঘরিতে সময় দেখে নিল মমেনা। সাড়ে নয়টা বেজে গেছে। ওর বাসা এখান থেকে হাটা পথে বিশ মিনিটের পথ। রিকসা খুজলো কিন্তু কোন রিকসাই যেতে রাজি হলো না। এদিকে রাতও বেড়ে যাচ্ছে। অগত্যা হাটা শুরু করলো ও। দশ মিনিট হেটে এসেছে। রাস্তার এই অংশটা একদম নিরব। কোন মানুষ জনই নেই এখানে। এখানে ল্যাম্পপোস্টও নষ্ট হয়ে থাকে সব সময়। জায়গাটা ভালো না। এখানে প্রায় প্রায়ই ছিন্তাই হয়। ওরাই হয়তো এখানের ল্যাম্পপোস্টের লাইঠ নষ্ট করে রাখে নিজেদের সুবিধার জন্য। দিনের বেলাতেই এখানে একদম ফাঁকা থাকে। রাত পৌনে দশটায় একেবারে নিরব চারদিক। ভয়ে ভয়ে রাস্তাটা পার হয়ে যাচ্ছে আর মনে মনে প্রার্থনা করছে, হে আল্লাহ এই যাত্রায় আমাকে বাঁচিয়ে দাও। তুমি রহমান রহিম, তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমাকে বাঁচাবার। আমি জানি আমি তোমার প্রিয় বান্দা, আর তাই আমাকে তুমি বাঁচাবেই। আমি তওবা করে বলছি, আমি আর জীবনে কোন দিনই বাস মিস করবো না। হে রহমানুর রাহিম, তুমি সর্ব শক্তিমান। তুমি ছাড়া আর কোনই ইলাহি নেই। এই যাত্রায় তুমি আমাকে বাঁচাও।
মমেনার প্রার্থনা হয়তো কবুল হয়েছে। দুজন লোক সামনে থেকে এগিয়ে আসছে রাস্তা ধরে। ওর দেহে প্রাণ ফিরে আসলো- যাক কেউ তাহলে আছে। সে একা নয়। ভয়টা একটু কমে যায় মমেনার।
লোক দুটো কাছে এসে মমেনার সামনে এসে দাঁড়ালো। রাস্তার পাশে কোনার অন্ধকার থেকে আরো ছয় সাত জন লোক এসে ওকে ঘিরে ফেললো। "আল্লাহ আমাকে বাঁচাও", বলে বিকট চিতকার দিয়ে ওঠলো মমেনা।

সাত দিন পর। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে মমেনা। মনে অস্বীম ক্রুধ নিয়ে এক পলকে তাকিয়ে আছে অদৃশ্যের দিকে। কার ওপরে এই ক্রুধ বোঝা গেল না। আত্বীয় সজন অনুমান করলো এই ক্রুধটা হয়তো সেই বর্বরদের উপর যারা ওর এই অবস্থা করেছে।
কিন্তু মমেরার ক্রুধ সেই বর্বরদের উপরে নয়। তার ক্রুধ সেই মহান স্বত্ত্বাটির উপর যার এবাদতে সে তার সারাটি জীবন উতসর্গ করেছিল। হয়েছিল পরহেজগার। কিন্তু সেই সৃষ্টিকর্তা যাকে সে সারা জীবন রব বলে প্রার্থনা করে এসেছে সেই রব তাকে রক্ষা করেনি। পনেরো জন নরপিশাচ সারা রাত ধরে ওর উপরে অমানুষিক অত্যাচার করেছে আর ও প্রাণ পণে চিতকার করে সেই রবের কাছে সাহায্য চেয়েছে। কিন্তু কেও তাকে রক্ষা করেনি। কোন দয়াময় প্রভু তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। সে অমানুষিক যন্ত্রনায় কাতরেছে আর সৃষ্টিকর্তার একটু দয়া ভিক্ষা চেয়েছে। কিন্তু সেই দয়াময় তাক নরপশুদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করেনি।
তাই জগতের সমস্ত ক্রুধ সেই রবের উপরে যার ইবাদত করে এসেছে সারাটি জীবন।

এই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে অনেক তুলপাড় হয়েছে। সারা দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অপরাধিদেরকে শাস্তি দেবার জন্য অনসন করছে। সাধারণ মানুষ সেই অমানুষদের প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করেছে।
কিন্তু দেশের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষ মুখ বাঁকা করে অনলাইনে নানা উপদেশ নামা ঝেরেছে- "ওই মেয়ে এতো রাতে কেন রাস্তায় বেড়িয়েছিল? পর্দা না করে রাস্তায় বের হলেতো এমনটা হবেই! মেয়েরা থাকবে বাড়ির ভিতরে। ওকে রাস্তায় যেতে বলেছে কে? পর্দা ছাড়া রাত বিরাতে রাস্তায় বের হবে আর এতে ধর্ষিত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। ধর্ষকদের যতটা না দোষ তার চেয়ে বেশী দোষ ওই মেয়েটিরই।

এক বছর পর। মমেনা বেঁচে আছে খুব ভালো করে। সে ইউনিভার্সিটিতে যায়। তার একটাই স্বপ্ন গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করা। সে এখন আর পর্দা করে না। বাস মিস করলেও তার ভয় নেই। সে ভিরের মধ্যে বাসে ওঠে যায়। ইউনিভার্সিটার বন্ধু বান্ধবিও অনেক। সারা জীবন যাদেরকে মুনাফেক কাফের বলে গালি দিয়ে এসেছে, সারা জীবন যাদেরকে লাফাংগা শয়তান বলে মনে মনে গালি দিয়ে এসেছে, তারাই তার বিপদের সময় পাশে দাড়িয়েছিল। পাঁচবার আত্বহত্যা করতে চেয়েছিল মমেনা। কিন্তু এই মুনাফেক কাফির গুলোই ওকে বাঁচিয়ে তুলেছে। সান্তনা দিয়ে বাঁচার প্রেরনা যুগিয়েছে। সব সময় সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছে এই লাফাঙ্গা শয়তান গুলোই। সব সময় যাদেককে ও কাছে ঘেষতে দেয়নি আজ ওরাই তার একমাত্র বেঁচে থাকার প্রেরণা। ওরাই আপনজন। ওরাই বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে থাকা ওর প্রিয় বন্ধু।
এখন মমেনা নামাজ পড়ে না এক বারও। পর্দা করে না কখনই। ভীর ঠেলে বাসে উঠে যায়। তাই বাসায় ফিরতে দেরী হয় না আর। নরপশুদের খপ্পরেও তাকে পরতে হয়নি কখনই।
সে আর পরহেজগার নেই। অনলাইনে সে নিয়মিত লেখালেখি করে। দেশে এখন সে পরিচিত এক নাম। ব্লগার মমেনা। সবাই চেনে ওকে।
কিন্তু একটা শ্রেণীর মানুষ তাকে এখন ঘৃনা করে। তাকে তারা গালাগালি করে। তারা তাকে গালি দেয় নাস্তিক ব্লগার বলে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন